পারভীন

পারভীন

 বাসররাতে পারভীন আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, জীবনে অন্য কোনো মেয়ের কথা আমি কখনো চিন্তা করেছি কি না। আমি বললাম, করিনি। তবে একটা মেয়ের কথা মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়। সেই মেয়ের নামও পারভীন। কখনো অন্যমনস্ক হলে বা শূন্যতায় আক্রান্ত হলে মেয়েটার কথা আমার মনে পড়ে। মনে পড়ে, একটা আকুতিভরা চাহনি। তবে এর মধ্যে কোনো রোমান্টিক আসক্তির ব্যাপার নেই। শূন্যতার সঙ্গে মেয়েটার একটা যোগ আছে বলেই হয়তো তাকে মনে পড়ে।

পারভীন আশ্বস্ত হলো কি না, অল্প আলোয় ঠিকমতো বোঝা গেল না। তবে সে বলল, ঘটনাটা সে জানতে চায়। তখন আমি তাকে গল্পটা বলতে শুরু করি। এটা ওই রাতে তাকে বলা আমার তৃতীয় গল্প।

ফুলশয্যার পুরো রাত আমরা গল্প করে কাটাব বলে ঠিক করেছিলাম। আমি আমার পুলিশজীবনের গল্প বলছিলাম। বেছে বেছে আমি সেই ঘটনাগুলো বলছিলাম, যেগুলো পারভীনকে চমৎকৃত করবে। যে অচেনা লোকের সঙ্গে সে সারা জীবন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হতে পারে সেই লোক পুলিশের নিয়মিত পোশাক পরে না, কিন্তু তার জীবন যে কম বৈচিত্র্যময় আর কম আকর্ষণীয় নয়, সেটা হয়তো সে বুঝতে পারবে।

সমস্যা হলো, অপরাধী পাকড়াও করার যেকোনো গল্প বলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের বিবরণ এড়ানো কঠিন হয়। মানুষের বেশির ভাগ অপরাধ নৃশংস। সেগুলোর বিবরণ বাসররাতের মাধুর্যের সঙ্গে বেমানান। সে কারণে আমি অপরাধের বিবরণ এড়িয়ে গল্পগুলো বলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারভীনের অপহরণের গল্পটা বলার সময় আমি এই বিবেচনাবোধ রাখতে পারলাম না এবং নববধূকে একটা বীভৎসতার গল্প এমন অবলীলায় বলতে শুরু করলাম যে লক্ষই করলাম না, ঠান্ডা এড়ানোর নাম করে সে কখন বালিশে কান চাপ দিয়েছে।

পারভীনের গল্পটা আমি যখন পারভীনকে বলতে শুরু করি, তার বহু আগে মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে, তবে ভোর হতে তখনো বেশ বাকি। ততক্ষণে বিয়েবাড়ির গুঞ্জন থিতিয়ে এসেছে। মেয়ের বাড়ির আত্মীয়স্বজন আর বরযাত্রীদের শোবার আয়োজন নিয়ে প্রতিটি বিয়েবাড়িতে যেসব জটিল অঙ্ক ও মন-কষাকষি চলে, সেগুলোও মোটামুটি শেষ। বয়স্করা ঘুমিয়ে গেছে। কম বয়সীরা নানা রকম খুনসুটি শেষে ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছে। উঠানের প্যান্ডেলের আলোয় আদাবাটা আর ঘিয়ের অবশিষ্ট আবছা গন্ধের মধ্যে টেবিল জোড়া লাগিয়ে বাবুর্চি আর ডেকোরেটররা ঘুমানোর আয়োজন করছে।

পারভীনের নাগাল পেয়েছিলাম মেরিনা নামের এক মেয়ের অপহরণের ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে, আমি বলতে শুরু করি। মেরিনাদের বাসা ঢাকা শহরের এক প্রান্তে ‘বেরাইদ’ নামের একটা ঝিল এলাকায়। চারপাশে আবাসন প্রকল্পের ধুন্ধুমার চললেও ওখানকার ফকিরখালী এলাকাটা এখনো কিছুটা গ্রাম–গ্রাম। দু-এক ফালি ধানখেতও চোখে পড়তে পারে। জায়গাটা তখনো সিটি করপোরেশনের অধীন আসেনি।

মেরিনা ফকিরখালি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে মাইল দুয়েক দূরে বাড্ডায় মহানগর ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। বেরাইদে নীলা মার্কেটের সামনে থেকে সে একটা টেম্পোতে চেপে কুড়িল বিশ্বরোডে এসে নামত। তারপর বাসে চেপে মধ্যবাড্ডায় তার কলেজে যেত।

সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় মার্চে মেরিনা নিখোঁজ হয়। কলেজের উদ্দেশে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। আমাদের ডিবিতে মামলাটা আসে তার নিখোঁজ হওয়ার চার মাস পর। আমাকে তখন সদ্য থানা থেকে সরিয়ে ডিবিতে প্লেস করা হয়েছে। তদন্তের ভার পড়েছিল খায়রুল নামের এক সিনিয়র অফিসারের ওপর। তিনি এক হাতে তিনটি মামলা সামলাচ্ছিলেন। আমি তার মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে সারা ঢাকা শহর ঘুরি। তাকে দাপ্তরিক সহায়তা জোগাই।

অপর দুই মামলা কিছুটা পলিটিক্যাল ছিল বলে এসআই খায়রুলের মূল মনোযোগ ছিল সেগুলোর দিকে। মেরিনার অন্তর্ধান তদন্ত তেমন এগোচ্ছিল না। ফলে আমি কিছুটা উপযাচিত হয়ে আর কিছুটা মেরিনার বাবার নিয়মিত ধরনার চাপে পড়ে নিজে খোঁজখবর শুরু করি এবং সপ্তাহখানেকের মধ্যে বেশ কিছু লিড পেয়ে যাই। তদন্ত খুব কঠিন ছিল না। বিশেষ করে ফোনকল রেকর্ড ট্রেস করে ওমর ফারুক নামের একজনকে শনাক্ত করতে আমার খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। লোকটা উত্তর বাড্ডায় ‘গোল্ডেন ভ্যালি’ নামের একটা ট্রাভেল এজেন্সি চালায়। একসময় ভালো ব্যবসা ছিল। অনেক স্টাফ। পরে মালিকানা নিয়ে পার্টনারদের দ্বন্দ্বে ব্যবসা পড়ে যেতে থাকে।

ওমর ফারুক মেরিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি করে। তাকে প্রায়ই ফোন করত। কোনো কোনো ফোন রাত ১২টার পরও করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার মাসখানেক আগে থেকে মেরিনাকে নিয়মিত দেখা যায় কুড়িল থেকে মধ্যবাড্ডায় তার কলেজ পর্যন্ত বাসে না এসে একটা প্রাইভেট কারে আসতে। কুড়িল বাসস্ট্যান্ডের একাধিক দোকানদার এবং মহানগর কলেজের দুজন সহপাঠী এটা নিশ্চিত করে। ২০০৫ সালে ম্যানুফ্যাকচার্ড এক্স-করোলা মডেলের অফ হোয়াইট প্রাইভেট কারটি ২০১২ সালে ওমর ফারুকের নামে রেজিস্ট্রি করা।

৪২ বছর বয়সী বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হলো। কোর্ট তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিল। মিন্টো রোডে গগন শিরীষগাছের ছায়ায় আমাদের ডিবি কার্যালয়ের দোতলার ইন্টারোগেশন সেলে একটা ৮০০ ওয়াটের ঢাকনা দেওয়া বৈদ্যুতিক বাতির নিচে কাঠের চেয়ারে বসে চতুর্থ দিনের জেরার মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে ওমর ফারুক ক্র্যাক করে। সে সব স্বীকার করতে শুরু করে।

পত্রিকার খবর পড়ার মতো নিস্পৃহ ভঙ্গিমায় প্রায় ও রকমই কেতাবি ভাষায় সে বর্ণনা করে যায়, কীভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং বিদেশের ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মেরিনাকে সে শাহজাহানপুরে একটা দোতলা বাড়ির ওপরের তলায় তার ভাড়া করা একটি গোপন বাসায় নিয়ে আসে এবং সেই বাসার একটা কক্ষে তিন দিন বেঁধে রেখে ১১ বার ধর্ষণের পর গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। তারপর লাশ তার এক্স-করোলা গাড়ির বুটে বহন করে শ্রীপুরের এক শালবনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখে আসে।

শালবনের মধ্যে ওই জায়গা খুঁজে বের করে আমাদের দেখাতে ওমর ফারুকের কিছুটা বেগ পেতে হলো। পাঁচ মাস পরে লাশ গলে অনেকখানি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মেরিনার বাবা কাপড় দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন। আমরা ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল রেখে লাশ বাবার হাতে তুলে দিই।

ইন্টারোগেশন সেলে ওমর ফারুক কোনোরকম অনুশোচনা ছাড়া তার অপরাধের বর্ণনা দিয়েছিল এবং তা বেশ বিস্তারিতভাবে। জিজ্ঞেস করা না হলেও সে অপ্রয়োজনে অনেক কিছুর ডিটেইল বিবরণ দিচ্ছিল। তখন সেখানে আমি এবং এসআই খায়রুল ছাড়াও এসপি ওয়াহিদ ছিলেন। তিনি মাঝপথে বেরিয়ে যান। পরে শুনেছি, তিনি বমি করেছিলেন।

নিজের অপরাধকর্মের এ রকম নিস্পৃহ বিবরণ দেওয়ার ক্ষমতা দেখে ওমর ফারুক সম্পর্কে একটা ব্যাপার আমি আর এসআই খায়রুল নিশ্চিত হয়ে যাই—লোকটা অপ্রকৃতিস্থ।

আদালত আমাদের আরও দুদিনের বাড়তি রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সপ্তম দিন রিমান্ডের একেবারে শেষ পর্যায়ে ওমর ফারুক সেই কথা স্বীকার করে, যেটার সন্দেহ আমি ও খায়রুল ভাই দুজনেই মনে মনে করছিলাম, কিন্তু মুখ ফুটে একজন আরেকজনকে বলিনি।

মেরিনা ওমর ফারুকের একমাত্র শিকার নয়।

মেরিনা হত্যার আগের ১৮ মাসে সে আরও ৪টি এবং পরে আরও ১টি মেয়েকে একই পদ্ধতিতে হত্যা করেছে। এই ছয় হত্যা ঘটেছে শাহজাহানপুরের পরিত্যক্ত দোতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ছয়টি ভিন্ন অথচ প্রায় একই রকম ধারালো ছুরি দিয়ে।

ওমর ফারুক একজন সিরিয়াল কিলার। বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র।

পরবর্তী তিনটি দিন গাজীপুরের শালবনের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা আরও পাঁচটি লাশ মাটি খুঁড়ে তুলে আনার মহাযজ্ঞে শামিল হই। এর মধ্যে একটি তাজা, প্রায় অবিকৃত লাশ। বাকি চারটি, বলা বাহুল্য, কেবলই হাড়গোড়।

ওমর ফারুকের স্মৃতি ফটোগ্রাফিক। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিবরণই কেবল নয়, প্রত্যেক ভিকটিমের অনুপুঙ্খ বিবরণ দিল সে। ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে সে এসব ভিকটিমকে সংগ্রহ করেছে। এ কারণে দুই বছরে একের পর এক ছয় নিখোঁজের ঘটনা আলাদা করে রেখাপাত করেনি পুলিশের খাতায়। ভিকটিমদের মধ্যে মানিকগঞ্জ শহরের স্কুলশিক্ষিকা থেকে শুরু করে রূপগঞ্জের পোশাক কারখানার ফ্লোর-ইন-চার্জও আছে। তাদের বয়সও ভ্যারিড।

শিকারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমরা ওমর ফারুকের কাছ থেকেই পেলাম। মরদেহ পাওয়ার তথ্য ভিকটিমের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি আমাকে করতে হয়েছে। একটা নিখোঁজ মানুষের বাড়িতে বহুদিন বাদে হাজির হয়ে তার আত্মীয়স্বজনের কাছে দুঃসংবাদটি দেওয়া এবং তাদের শূন্যদৃষ্টির সামনে বসার ঘরে বসে থাকার অস্বস্তি আমার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠতে শুরু করে।

ওমরের হাতে নিহত চতুর্থ মেয়েটি পারভীন। পারভীন কাজী নজরুল কলেজ থেকে ভূগোলে পাস করে গোপীবাগে আড়ংয়ের একটি আউটলেটে কাজ করত। ওই ঘটনার দুই বছর আগে পরাগ নামের একটি ছেলেকে সে বিয়ে করে, যে আড়ংয়ের ওই আউটলেটেই কাউন্টারে বসত। তাদের বিয়ের কারণে সায়েন্স ল্যাব আউটলেটে পরাগ বদলি হয়ে যায়। দুজনে থাকত আজিমপুরে ছাপরা মসজিদ এলাকায় দুই রুমের একটি ভাড়া বাসায়। তাদের কোনো সন্তান ছিল না।

পারভীনের কথা ওমর ফারুকের মুখে শোনার সময় একবার ঝলকের তরে আমার মনে হয়েছিল, কালো রঙের কামিজ আর গেরুয়া পায়জামা ও ওড়না পরা এই মেয়ের সঙ্গে হয়তো আগে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। কেননা, আড়ংয়ের ওই আউটলেটে আমি কয়েকবার গেছি। কাপড় কিনেছি। হয়তো ওই মেয়ে আমাকে শার্ট বা বিছানার চাদর খুলে দেখিয়েছে। হয়তো আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, ট্রায়াল রুমটা কোন দিকে।

মেরিনার লাশ সবার আগে তোলা হয়েছিল তার বাবার উপস্থিতিতে। কিন্তু বাকি পাঁচ ভিকটিমের কঙ্কাল আমরা নিজেরা তুলি।

একে একে চার ভিকটিমের বাসায় গিয়ে আমি খবর দিই। সবার শেষে গিয়েছিলাম পারভীনের বাসায়। সেখানে গিয়ে দুঃসংবাদটি আমার দেওয়া হয়নি। আজিমপুরের ছাপরা মসজিদসংলগ্ন একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ডান পাশের দরজায় কড়া নাড়লে যে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়, সে পারভীন। ১৬ মাস আগে সে তিন দিনের জন্য নিখোঁজ হয়েছিল বটে। ফিরে এসেছে। তার মনে নেই ওই তিন দিন কী হয়েছিল, সে কোথায় ছিল।

এই কথাগুলো পারভীন বলছিল দরজায় দাঁড়িয়ে, পাল্লা আধখোলা রেখে।

শেষের দিকে পরাগ স্ত্রীর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে জানতে চেয়েছিল, আমি কেন এসেছি। আমি আর ভেঙে বলিনি কিছু। শুধু বলেছি, ১৬ মাস আগের ওই নিখোঁজ ঘটনা আর্কাইভে নথিভুক্ত করার আগে রুটিন চেকের অংশ হিসেবে আমার আসা। তারা অর্ধেক বিশ্বাস করে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।

ওই ভবন থেকে বেরিয়ে সদর রাস্তায় ওঠার আগে আমি একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেছি, চারতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পারভীন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই, তবু আমার কেন যেন মনে হয়েছিল, তার দুটি অসহায় চোখে ছিল প্রবল আকুতি। আমি নিশ্চিত এই চাহনি আমি কল্পনা করে নিইনি।

মামলার নথি সাজানো নিয়ে ডিবি অফিসে অনেক টানাপোড়েন হলো। ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে আমি পাঁচ খুনের অভিযোগ আনার গোঁ ধরলাম। অনেক বিতর্কের পর অবশেষে ছয় খুনেরই অভিযোগ আনা হলো। একটি ভিকটিমের পরিচয় রাখা হলো অজ্ঞাত, যদিও আমি জানি, এসআই খায়রুলও আমার সঙ্গে একমত, উন্মাদ লোকটা তার ভিকটিমদের পরিচয় নিয়ে কোনো তথ্য বানিয়ে বলেনি।


COMMENTS

Designed by Sneeit.Com
Name

poem,1,Story,1,
ltr
item
Rony's Blog: পারভীন
পারভীন
https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2024-01%2Fa123e7a2-8947-4668-99cf-9a338a1b0356%2Fparvin.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0
Rony's Blog
https://ronydhk.blogspot.com/2024/02/blog-post.html
https://ronydhk.blogspot.com/
https://ronydhk.blogspot.com/
https://ronydhk.blogspot.com/2024/02/blog-post.html
true
1021177787952813875
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content